ঈদযাত্রায় ১৩ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২৮৩, আহত ৩১৯

Passenger Voice    |    ০১:১৫ পিএম, ২০২১-০৫-২২


ঈদযাত্রায় ১৩ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২৮৩, আহত ৩১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিগত ঈদুল ফিতরে দেশের সড়ক মহাসড়কে ২২৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৮৩ জন নিহত, ৩১৯ জন আহত হয়েছে (প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক)। নৌপথে বাংলাবাজার ফেরি ঘাটে ফেরিতে হুড়াহুড়িতে পদদলিত হয়ে ৫ জন নিহত ও শতাধিক অসুস্থ হয়েছিল বলে জানিয়েছে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। 

আজ ২২ মে, শনিবার সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. সামসুদ্দীন চৌধুরী এই তথ্য তুলে ধরেন। সংগঠনটির দুর্ঘটনা গবেষণা ও মনিটরিং সেল ও প্যাসেঞ্জার ভয়েস ডটনেট যৌথভাবে এই প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ব মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের ন্যায় এবছরও প্রথম রমজান থেকে কঠোর লকডাউন ছিল সারাদেশে। সারাদেশে গণপরিহন বন্ধ থাকলেও পণ্যপরিবহনের যান, ব্যক্তিগত পরিবহনে ঈদযাত্রা করলেও ঈদের আগে ও পরে সড়ক দুর্ঘটনা ছিল আগের তুলনায় বেশি। গত ০৮ মে থেকে ২০ মে পর্যন্ত ১৩ দিনে ২২৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৮৩ জন নিহত ও ৩১৯ জন আহত হয়েছেন। উল্লেখিত সময়ে রেলপথে ট্রেনেকাটা পরে ১ জন নিহত একই সময়ে নৌ-পথে বিচ্ছিন্ন দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। 

যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের দুর্ঘটনা গবেষণা ও মনিটরিং সেলের সদস্যরা দেশের বহুল প্রচারিত বিশ্বাসযোগ্য ১৩টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি আঞ্চলিক দৈনিক ও ১০টি অনলাইন নিউজপোর্টালে প্রকাশিত সংবাদের তথ্য মনিটরিং করে এ প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, উল্লিখিত সময়ে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা নিন্মরূপ 


যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের তথ্যমতে, বিগত ২০১৯ সালের ঈদুল ফিতরের ঈদযাত্রায় ১৮৫ সড়ক দুর্ঘটনায় ২২১ জন নিহত ও ৬৫২ জন আহত হয়েছিল, এছাড়া ২০২০ সালের ঈদুল ফিতরে ১৪৩ সড়ক দুর্ঘটনায় ১৬২ জন নিহত, ২৭১ জন আহত হয়েছে। গতবছরের চেয়ে এবারের ঈদযাত্রায় ৭৪ শতাংশ নিহতের সংখ্যা রড়েছে।  

এবারের ঈদে নরসিংদীতে যাত্রীবাহী বাস ও মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে রাজধানীর নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের ডাঃ জহিরুল হক ও ডাঃ তুহিন, গাজীপুরে র‌্যাব-৪ এর সার্জেন্ট খায়রুল ইসলাম, সাভারে মিরপুর কম্বাইন্ড স্কুলের শিক্ষিকা মিরা আরফিন, লালমনিরহাট জেলা মটর মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ এবং আরজি পরিবহনের মালিক অনুপ কুমার বাপ্পী, পটুয়াখালীতে সাবিনা আক্তার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সেলিনা আক্তার, সিলেট ব্রাক্ষণগ্রাম হযরত শাহজালাল (রঃ) ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আমিরুল ইসলাম প্রমুখ মারা যায়। এছাড়াও ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাংসদ আনোয়ারুল আজীম, কালীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শিবলী নোমানী, নাটোরের বড়াইগ্রামে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শামীম হোসেন ও তার স্ত্রী-পুত্র দুর্ঘটনায় আহত হয়।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায় মোট যানবাহনের ১৯টি বাস-মিনিবাস, ৬৭ টি ট্রাক-কাভার্ডভ্যান ও পিকআপ, ৩৪ টি কার-মাইক্রো, ৪৫ টি নছিমন-করিমন, ভটভটি-ইজিবাইক, অটোরিকশা, ৯৩টি মোটরসাইকেল, ১৭টি অন্যান্য যানবাহন এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল। দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬৩টি গাড়িচাপায়, ৮০টি সংঘর্ষ, ১৬টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, অন্যান্য কারণে ৬৫টি দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়।

যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ১. লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ছোট যানবাহনে যাত্রী চাপ, ২. ফাঁকা রাস্তায় চালকদের প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব ও অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো, ৩. অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, ৪. অদক্ষ চালক হাতে দৈনিক চুক্তিতে যানবাহন ভাড়া দেয়া, ৫. ফিটনেসবিহীন যানবাহনে যাত্রী বহন, ৬. মহাসড়কে অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, নছিমন-করিমন অবাধে চলাচল, ৭. বিপজ্জনক ওভারটেকিং, ৮. পণ্যপরিবহনের যানে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে যাত্রী বহন, ৯. যাত্রীদের ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার অভাব এসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী, ১০. টিনএজারদের বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেল এইসব দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।